শনিবার, ২০ মার্চ, ২০১০

সবই ব্যাদে আছে ! - ড. মেঘনাদ সাহা

খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ড. মেঘনাদ সাহা একবার মাসিক ভারতবর্ষ পত্রিকায়, 'একটি নতুন জীবন দর্শন' (১৩ নভেম্বর, ১৯৩৮) শিরোনামের একটি প্রবন্ধে, কটাক্ষমূলক একটি উক্তি করেছিলেন। উক্তিটি হল -'সবই ব্যাদে আছ'! এই উক্তিটি নিয়ে অনিলবরণ রায় নামের এক হিন্দুত্ববাদী ব্যাপক জলঘোলা করা শুরু করলে, এর ব্যাখ্যায় মেঘনাদ সাহা যা বলেন, তা এখানে তুলে ধরছি।

"... প্রায় আঠারো বৎসর পূর্বেকার কথা। আমি তখন প্রথম বিলাত হইতে ফিরিয়াছি। বৈজ্ঞানিক জগতে তখন আমার সামান্য কিছু সুনাম হইয়াছে। ঢাকা শহরবাসী লব্ধপ্রতিষ্ঠিত এক উকিল আমি কি বৈজ্ঞানিক কাজ করিয়াছি তাহা জানিবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। আমি উৎসাহভরে তাহাকে আমার প্রথম জীবনের তদানীন্তন গবেষণা সম্বন্ধে সবিশেষ বর্ণনা দেই। তিনি দু-এক মিনিট পরপরই বলিয়া উঠিতে লাগিলেন, "এ আর নতুন কি হইল, এ সমস্তই ব্যাদ-এ আছে"। আমি দু একবার মৃদু আপত্তি করিবার পর বলিলাম, 'মহাশয় এ সব তত্ত্ব বেদের কোন অংশে আছে তাহা অনুগ্রহ পূর্বক দেখাইয়া দিবেন কি?' তিনি বলিলেন, "আমি তো ব্যাদ পড়ি নাই, কিন্তু আমার বিশ্বাস তোমরা নূতন বিজ্ঞানে যাহা করিয়াছ বলিয়া দাবি কর, তাহা সমস্তই 'ব্যাদে' আছে"।

বলা বাহুল্য যে, বিগত কুড়ি বৎসর ধরিয়া বেদ, উপনিষদ, পুরাণ ইত্যাদি সমস্ত হিন্দুশাস্ত্র এবং হিন্দু জ্যোতিষ ও অপরাপর বিজ্ঞান সম্বন্ধীয় প্রাচীন গ্রন্থাদি তন্ন তন্ন করিয়া খুঁজিয়া আমি কোথাও আবিষ্কার করিতে সক্ষম হই নাই যে, এই সমস্ত প্রাচীন গ্রন্থে বর্তমান বিজ্ঞানের মূলতত্ত্ব নিহিত আছে।

অনেকে মনে করেন, ভাস্করাচর্য একাদশ শতাব্দীতে অতিস্পষ্টভাবে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন, সুতরাং তিনি নিউটনের সমতুল্য। অর্থাৎ নিউটন আর নতুন কি করিয়াছে? কিন্তু এই সমস্ত "অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী" শ্রেণীর তার্কিকগন ভুলিয়া যান যে, ভাস্করাচর্য কোথাও পৃথিবী ও অপরাপর গ্রহ সূর্যের চারিদিকে বৃত্তাভাস (elliptical) পথে ভ্রমণ করিতেছে - একথা বলেন নাই। তিনি কোথাও প্রমাণ করেন নাই যে, মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ও গতিবিদ্যার নিয়ম প্রয়োগ করিলে পৃথিবীর এবং অপরাপর গ্রহের পরিভ্রমণপথ নিরূপণ করা যায়। সুতরাং ভাস্করাচার্য বা কোন হিন্দু, গ্রীক বা আরবী পণ্ডিত কেপলার, গ্যালিলিও বা নিউটনের বহু পূর্বেই মাধ্যাকর্ষণতত্ত্ব আবিস্কার করিয়াছেন, এইরূপ উক্তি করা পাগলের প্রলাপ বই কিছু নয়। ..."

যারা প্রতিনিয়ত বেদ-বাইবেল-কোরান প্রভৃতি ধর্মীয় পুস্তকের নানা কোনাকাঞ্চিতে আধুনিক বিজ্ঞানের সন্ধান করেন, তাদের আমি ড. মেঘনাদ সাহার হিন্দু ধর্মে-বেদ-বিজ্ঞান সম্পর্কিত চিত্তাকর্ষক বাদানুবাদটি সংগ্রহ করে পড়তে অনুরোধ করি। লেখাটি এখনো যথেষ্ট আধুনিক ও প্রাসঙ্গিক।

1 টি মন্তব্য:

Neel বলেছেন...

Meghnad Saha er lekha ta online e paoa jabe ? ba pdf ?