শনিবার, ২০ মার্চ, ২০১০

চেক/স্লোভাক ছবি Obchod na korze (দ্যা শপ অন মেইন স্ট্রীট)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার নাৎসি জার্মানি অধিকৃত স্লোভাকিয়া। নাৎসিদের ধামাধরা স্থানিয় ফ্যাসিস্ট বাহিনী এখন সর্বত্র দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। ছুতোর মিস্ত্রি অ্যান্টন ব্রিকো ওরফে টোনো, একদিকে দারিদ্র্য, আরেকদিকে মুখরা বৌয়ের আক্রমণে পুরোদস্তুর পর্যুদস্ত। কাজের সন্ধানে সে, এদিক সেদিক ঘুরঘুর করে, কিন্তু যুদ্ধের বাজারে কাজ পাওয়াই দুস্কর। তার ওপরে নিতান্ত মৃদুভাষী, শান্তিপ্রিয় টোনোর পক্ষে কাজের জন্য ফ্যাসিস্ট কর্তাদের উমেদারি করা নিতান্তই অসম্ভব মনে হয়। তবু বৌয়ের তাড়া খেয়ে সকালবেলা বাড়ি থেকে বার হয়, আর সারা দিন গোটা শহর ঘুরে, বিকেলবেলায় খালি হাতে বাড়ি ফেরে। টোনোর ভায়রাভাই সুযোগ বুঝে ফ্যাসিস্ট বাহিনীতে যোগ দিয়ে, ইতিমধ্যেই কমান্ডার হয়ে গেছে। টোনো তাকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করলেও টোনোর বৌ তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। টোনোর বৌয়ের আশা, তাকে ধরতে পারলে টোনোর একটা হিল্লে হয়ে যেতে পারে। কিন্তু টোনো তার ভায়রাভাইয়ের সংস্পর্শ, সর্বতোভাবে এড়িয়ে চলতে চায়। অবশেষে একদিন টোনোর ভায়রাভাই, নিজেই টোনোর বাড়িতে হাজির হলো, টোনোর জন্য একটা কাজের সুযোগ নিয়ে। কিন্তু কাজটা কি? স্লোভাকিয়ায় নাৎসি বাহিনীর হুকুমে শহরের 'আর্যকরন' করা হচ্ছে, অর্থাৎ কিনা ইহুদী মালিকানাধীন সমস্ত দোকানের দখল তুলে দেওয়া হচ্ছে 'আর্য' স্লোভাকদের হাতে। সেভাবেই 'আর্য' স্লোভাক হিসেবে টোনোকে দেওয়া হচ্ছে এক ইহুদী বৃদ্ধার সেলাইয়ের সরঞ্জাম বিক্রির দোকানের 'আর্যকরন'-এর দায়িত্ব। একটু বেশি মাত্রায় বাস্তববাদী টোনোর বৌ, এক কথায় প্রস্তাবটা লুফে নিল। পরিস্থিতির চাপে একপ্রকার নিমরাজি হয়েই টোনো এই কাজের দায়িত্ব নিতে রাজি হয়ে গেল। টোনো পরের দিন সেই ইহুদী বৃদ্ধার দোকানে পৌঁছে দেখল, বৃদ্ধা কানে খুব কম শোনেন, তার ওপরে বার্ধক্য জনিত মানসিক বিভ্রান্তির কারনে, বহির্জগতে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি সম্পর্কে সম্পূর্ণ উদাসীন অথবা প্রতিক্রিয়াহীন। বৃদ্ধা টোনোকে কাজের সন্ধানে আসা ব্যক্তি ভেবে, দোকানের কর্মচারির কাজে বহাল করেন। এই সময় ওই দোকানে উপস্থিত একজন ফ্যাসিস্ট বিরোধী সংগঠক, টোনোকে জানান যে, এই দোকান চালিয়ে বৃদ্ধার যেটুকু লাভ হয়, তাতে দোকানের রক্ষণাবেক্ষণের খরচই ওঠে না। বৃদ্ধার ভরণপোষণ চলে পুরোটাই ইহুদী সম্প্রদায়ের তোলা চাঁদার টাকায়। একথা শুনে টোনো আতঙ্কিত হয়ে দোকানের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চাইলে, ওই ভদ্রলোক তাকে এই বলে নিরস্ত করেন, যে ইহুদি সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে তাকে প্রতি সপ্তাহে সংসার চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ যোগান দেওয়া হবে, বিনিময়ে সে ওই দোকানের দায়িত্ব ছাড়বেনা ও ওই বৃদ্ধার কাছে কর্মচারি সেজে কাজ করে যাবে। এটা তাঁরা ওই বৃদ্ধার সুরক্ষার জন্যই করছেন, নাহলে টোনোর জায়গায় অন্য কেউ দোকানের দায়িত্ব নিলে, সেই ব্যক্তি ওই বৃদ্ধার প্রতি ততটা সদয় নাও হতে পারে। এরপর টোনো পুরোদস্তুর দোকানদারির কাজে লেগে পড়ে ও ধীরে ধীরে বৃদ্ধার জন্য তার মনে একটা নরম জায়গা তৈরী হতে থাকে। একসময় নিজের অজান্তেই ওই বৃদ্ধাকে ভালবেসে ফেলে টোনো। কিন্তু নাৎসিরা তো ইহুদিদের শুধু ব্যবসা-বানিজ্য থেকে সরিয়ে দিয়েই সন্তুষ্ট নয়, তারা চায় ইহুদিদের সমাজ থেকে এমনকি পৃথিবী থেকেও মুছে দিতে। তাই কিছুদিনের মধ্যেই নির্দেশ জারি হল, শহরের সমস্ত ইহুদিকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানোর। নির্দিষ্ট দিনে শহরের সমস্ত ইহুদীকে এসে হাজিরা দিতে হবে শহরের প্রধান রাস্তায়, যেখান থেকে তাদের পশুবাহী ট্রেনে বোঝাই করে পাঠানো হবে, বিভিন্ন কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে। কিন্তু বৃদ্ধা এই সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ নির্বিকার। টোনো এখন কি করবে? ওই অশক্ত বৃদ্ধাকে তুলে দেবে নাৎসিদের হাতে? লুকিয়ে রাখবে নিজের কাছে? ওই বাস্তববিচ্ছিন্না বৃদ্ধাকে নিয়ে কোথায় যাবে টোনো? সেটা জানতে হলে দেখতে হবে "Obchod na korze" বা "দ্যা শপ অন মেইন স্ট্রীট"। ছবির পরিচালনা করেছেন Ján Kadár এবং Elmar Klos। টোনোর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন Jozef Kroner এবং ইহুদী বৃদ্ধার ভূমিকায় Ida Kamińska। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৬৫ সালের ৮ই অক্টোবর। ১৯৬৬ সালের অস্কারে শ্রেষ্ঠ বিদেশী ছবির মর্যাদা লাভ করে এই ছবিটি। এছাড়া একাধিক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতায় পুরষ্কৃত হয়েছে ছবিটি। ছবিটি সম্পর্কে আরও জানতে দেখুন: http://www.imdb.com/title/tt0059527/ । ছবিটিকে চেক না স্লোভাক বলা হবে তা নিয়ে চেক ও স্লোভাক প্রজাতন্ত্র আলাদা হয়ে যাবার পর অনেক বিতর্ক হয়েছে। আমি সেই অহেতুক বিতর্কের মধ্যে না গিয়ে, একে চেক/স্লোভাক বলেই উল্লেখ করেছি।

২টি মন্তব্য:

নামহীন বলেছেন...

ei blog ta follow korte chai. ki kore somvob?

নামহীন বলেছেন...

ei blog ta follow korte chai. ki kore somvob?