সোমবার, ২২ মার্চ, ২০১০

মান্না দে-এর কণ্ঠে হরিবংশ রাই বচ্চনের ‘মধুশালা’

যাঁরা হিন্দি সাহিত্য নিয়ে কিছু খোঁজখবর রাখেন, হরিবংশ রাই বচ্চনের নাম তাঁরা প্রায় সবাই জানেন বলে মনে হয়। হয়তো এটাও জানেন যে হরিবংশ রাই বচ্চনই হলেন বিখ্যাত বলিউড স্টার অমিতাভ বচ্চনের বাবা। তবে ছেলে যতই বিখ্যাত হোক না কেন, হরিবংশ রাই-এর প্রধান পরিচয় কিন্তু তাঁরই লেখা একটি কাব্যগ্রন্থ, যার নাম ‘মধুশালা’। এই সেই বিখ্যাত রচনা যা ১৯৩৫ সালে প্রকাশিত হওয়ার সাথেসাথেই হরিবংশ রাইকে এনে দিয়েছিল খ্যাতির পাদপ্রদীপের আলোয়। এই কাব্যগ্রন্থটি আজও হিন্দি সাহিত্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টিগুলির মধ্যে অন্যতম হিসাবে পরিগণিত হয়।

এবার আসি ‘মধুশালা’র ব্যাখ্যায়। মধুশালা (Hindi: मधुशाला) শব্দটি এখানে ব্যবহৃত হয়েছে, পানশালা অর্থে। এই বইটিতে রয়েছে হরিবংশ রাই বচ্চনের রচিত মোট ১৩৫টি চার লাইনের কবিতা, যাকে আরবীতে রুবাই (رباعی) বা বহুবচনে রুবাইয়াত (رباعیا) বলা হয়ে থাকে। কবিতাগুলির আলাদা করে কোন নাম দেওয়া হয়না, শুধু সংখ্যা দিয়ে এগুলিকে চিহ্নিত করা হয় শ্লোক বা আয়াতের মতো। এই ১৩৫টি রুবাই-এর প্রত্যেকটিই সমাপ্ত করা হয়েছে ‘মধুশালা’ শব্দটি দিয়ে। এই সুফী ভাবনা ও গভীর দার্শনিক বোধের দ্বারা প্রভাবিত এই কবিতাগুলিতে, কবি হরিবংশ রাই বচ্চন জীবনের জটিল ঘাতপ্রতিঘাতকে মোট চারটি প্রতীকী উপাদান – মধু, মদিরা, সাকি ও পেয়ালা এবং অবশ্যই মধুশালা, যা কিনা প্রতিটি রুবাইয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তার সাহায্যেই ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। এই metaphor গুলি মধুশালার প্রায় সবকটি রুবাইতেই ঘুরে ফিরে আসতে দেখি আমরা। মধুশালার সাহিত্য প্রকাশভঙ্গি হিন্দি সাহিত্যের ছায়াবাদী ধারার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হিসাবে গণ্য করা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মধুশালা প্রকাশিত হওয়ার পর এতে মদ্যপানের প্রচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ ঊঠেছিল। হরিবংশ রাই তাঁর নিজের জীবনীতে লিখেছেন, মহাত্মা গান্ধী মধুশালার কবিতাগুলি শোনার পরে এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভ্রান্ত বলে মন্তব্য করেন।

ওমর খৈয়ামের ‘রুবাইয়াত’ অনুবাদ করতে গিয়ে, গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন হরিবংশ রাই বচ্চন। তারই পরিণতিতে তাঁর হাত থেকে বেরিয়ে আসে রুবাইয়াতের ট্রিলজি (Trilogy), যার প্রথমটিই হল মধুশালা। পরের দুটির নাম যথাক্রমে মধুবালা (১৯৩৬) ও মধুকলস (১৯৩৭)। মধুশালা প্রকাশিত হওয়ার পরে বিভিন্ন কবিসম্মেলনে কবির স্বকণ্ঠে কবিতাটির সঙ্গীতময় আবৃত্তি শোনার জন্য মানুষ মুখিয়ে থাকত। মধুশালা আজও সর্বাধিক বিক্রিত হিন্দি কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে অন্যতম। এখনও প্রতি বছর এর দুই থেকে তিনটে করে সংস্করণ প্রকাশিত হয়। মধুশালার রুবাইগুলি আবৃত্তি, গান ও কোরিওগ্রাফির মধ্যে দিয়ে বহুবার উপস্থাপনা করা হয়েছে। প্রবাদপ্রতিম কণ্ঠশিল্পী মান্না দের কণ্ঠে মধুশালার নির্বাচিত কুড়িটি স্তবকের রেকর্ডিং প্রকাশ করেছিল HMV। এই রেকর্ডে মধুশালার প্রথম স্তবকটি শোনা যায় কবি হরিবংশ রাই বচ্চন-এর স্বকণ্ঠে। পরেরগুলি গেয়েছেন মান্না দে, তাঁর স্বকীয় শৈলীতে।

মান্না দের কণ্ঠে শুনুন মধুশালা:

অথবা ডাউনলোড করে নিন এখান থেকে:  http://soundcloud.com/jaybrata/madhushala/download

মধুশালার সিডি কভার

মধুশালা সম্পর্কে আরও জানুন: http://en.wikipedia.org/wiki/Madhushala

মধুশালা পড়ুন: http://www.manaskriti.com/kaavyaalaya/mdhshla.stm

মান্না দের গাওয়া মধুশালার কুড়িটি স্তবকের অনুবাদ: http://reocities.com/Paris/2583/madhushaalaa.html

1 টি মন্তব্য:

সুশান্ত কর বলেছেন...

শুনলাম, পড়লাম। অনেকদিন ধরে কিছু লিখছেন না মনে হচ্ছে। কেন?