কোন এক বিশুষ্ক আষাঢ়ের দিনে সমুদ্রের কাছে গিয়েছিলাম, দুচোখের তৃষ্ণা মেটাবার আশা নিয়ে। কিন্তু সেই রোদজ্বলা মেঘ মাখা আকাশ গায়ে জড়িয়ে, সমুদ্র এমন বেশে আমার সামনে দাঁড়াল যে আমার সে তৃষ্ণা যেন আরও সহস্রগুণ হয়ে দেখা দিল। বুকফাটা তৃষ্ণায় দিগ্বিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে তুলে ফেলেছিলাম একগুচ্ছ এলোমেলো ছবি, যাদের না আছে এক্সপোজারের ঠিক, না আছে কম্পোজিশনের মাথামুণ্ডু। তবুও ডিজিটাল ক্যামেরার বুদ্ধিবৃত্তির গুণে, নাকি আমার কপালগুণে, কিছু একটা যেন হয়ে উঠল এরা। কোনটা অদ্ভুত, কোনটা কিম্ভূত, আবার কোনটা বা কিছুই না অথবা বিমূর্ত। আর মেলা বকে লাভ নেই, ব্লগের পাঠককুল দেখুন... ইচ্ছা হলে যা খুশি অর্থ বার করুন... না হলে... কিন্তু করজোড়ে মিনতি করছি, আমাকে যেন আবার এসব ছবির ক্যাপশন লাগাতে বলবেন না।
বদ্রীনাথে কুয়াশা ঘেরা সকাল
যে কোন পাহাড়ী জায়গাতেই সকালবেলার শীতটা বেশ হাড় কাঁপানোই হয় দেখেছি। বদ্রীনাথে এসে এই মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহেও তার কোন ব্যাতিক্রম পেলাম না। কাল সারাটা দিন ধরে বাস জার্নি করেছি, অবশ্যই ভোর রাত থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়কে যদি সারা দিন বলে ধরা হয় তবেই। এটাই নাকি চার ধাম (কেদার, বদ্রী, গঙ্গোত্রী, যমুনেত্রী) তীর্থযাত্রার পিক টাইম (আগে জানতাম না, জানলে অন্য সময়ে আসতাম)। ফলে যোশিমঠে ওয়ান ওয়ে রাস্তায় বিরাট লাইন, সেখানে অপেক্ষা করতে করতেই অন্ধকার নামার উপক্রম হল। হরিদ্বার থেকে যে বেসরকারি সংস্থার বাসে এসেছি তাকে স্থানীয় লোকজন “ভূখ হরতাল” বাস বলেই চেনে, যদিও এর অফিসিয়াল নাম “কোটদ্বার পরিবহন লিমিটেড”। বোধহয় সংস্থার কর্মীরা অনশন করে নিজেদের দাবিদাওয়া আদায় করেছিল কোন এক সময়ে; সেই থেকেই এই নামটা চালু হয়ে গেছে। বাসগুলো ভাঙাচোরা না হলেও, আরামদায়ক একেবারেই নয়, তবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। কিন্তু রাস্তায় বেরলে সে আর কতক্ষণ থাকে। বাস ভর্তি উঠেছে বিহার, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থানের দেহাতী তীর্থযাত্রীর দল। ভোর বেলা বাসে উঠেই সিট নিয়ে ঝগড়া লাগাল। ওদের সবাইকে সামনের দিকের জানলার ধারে সিট দেয়নি কেন, হোটেল থেকে বুকিং করার সময় তো বুকিং এজেন্ট তো এরকমই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ইত্যাদি ইত্যাদি। তারপর হৃষীকেশ থেকে পাহাড়ী রাস্তা ধরতেই ওয়াক ওয়াক – বমি করে গোটা বাস ভাসাতে লাগল। এর মধ্যে নাকে রুমাল চেপে জানলার দিকে তাকিয়ে যতদূর সম্ভব প্রাকৃতিক দৃশ্যে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখার প্রাণপণ চেষ্টা আমাদের। বাসের কন্ডাক্টর দেখলাম বেজায় পরিশ্রমী আর সৎ। সারা রাস্তায় বাড়তি পয়সার লোভে পড়ে একটাও বাড়তি লোক তুলল না। আবার যোশীমঠে এসে রাস্তা খোলার জন্য অপেক্ষা করার সময়, ঝাঁটা আর জল নিয়ে গোটা বাস পরিষ্কার করল। আহা! এমন কন্ডাক্টর যদি কলকাতার বাসগুলোয় থাকত। যোশীমঠ থেকে বাস ছাড়ার অল্পক্ষণের মধ্যেই অন্ধকার নেমে এল। ধ্বসে ভাঙাচোরা পাক খাওয়া পাহাড়ী রাস্তা দিয়ে লাফাতে লাফাতে বাস ক্রমশই উপরে উঠতে লাগল। অন্ধকারে বাইরের দৃশ্য কিছুই দেখতে পাচ্ছি না, শুধু জানলার কাচ মাঝে মাঝে পাহাড়ী ঝর্নার জলে ভিজে যাচ্ছে। আর বুড়োদের শ্বাসকষ্ট দেখে বুঝছি, উচ্চতা দ্রুত বাড়ছে। অন্ধকার রাস্তায় ছুটতে ছুটতে কোন একটা গাড্ডায় পড়ে বাসটা প্রবল একটা ঝাঁকুনি খাচ্ছে আর বাসে বোঝাই দেহাতীর দল আতঙ্কিত গলায় সমস্বরে চিৎকার করে উঠছে “বোলো শ্রী বদ্রিনাথজী কি জয়”। শেষের দিকে কয়েকজন তো কাঁদতে শুরু করে দিল। তখন মনে মনে ভাবছি “ওরে ব্যাটা তোদের এতই যদি মরার ভয় তো এই সব দুর্গম তীর্থস্থানে যাওয়া কেন? ঘরে বসে পেন্নাম ঠুকলেই তো পারিস।” যাত্রাপথের শেষ চরণে বেশ একটা মিস্টিক রোমাঞ্চের অনুভূতি আসছিল, দেহাতীগুলোর দলবদ্ধ চিৎকারে পুরো মেজাজটাই মাটি। যাই হোক শেষ পর্যন্ত নির্বিঘ্নে বদ্রীনাথে পৌঁছেই গেলাম। সেখানে গিয়েও দেখি বিশাল ট্রাফিক জ্যাম। অনেকটা জ্যাম ঠেলে, বেশ কিছুটা রাস্তা পায়ে হেঁটে পৌঁছে গেলাম আমাদের গন্তব্যস্থল ভারত সেবাশ্রমের ধর্মশালায়। এখানেই আজকের মত রাত্রিবাস। রাতে খেতে গিয়ে দেখি একে নিরামিষ তাতে আবার বিস্বাদ খিচুড়ি আর পাঁপড়ের আয়োজন রয়েছে রন্ধনশালায়। কি আর করি, খিদেয় পেট জ্বলছে, অগত্যা ওই বিস্বাদ খিচুড়ি গিলে নিলাম পেট ভরে। ভারত সেবাশ্রমের ক্যান্টিনে এত অখাদ্য খাবার আর কোথাও পাইনি। পরে জেনেছিলাম খরচ বাঁচানোর জন্য ক্যান্টিনের বরাত দেওয়া হয়েছে ঠিকাদারকে। নিজের মুনাফা বাড়াতে খাবারের এই দশা করে ছেড়েছে সে।
বদ্রীনাথ মন্দিরের সামনে তীর্থযাত্রীর সারি
বদ্রীনাথের পারিপার্শ্বিক
পাহাড়ে ঘেরা বদ্রীনাথ ধাম
সকালে উঠে প্রথমে কনকনে বরফ ঠান্ডা জলে হাত মুখ ধুয়ে, চানের জন্য গরম জলের সন্ধান করতে কিচেনে ছুটলাম। গরম জল জোগাড় করে স্নান সেরে তৈরী হতে হতে কিছুটা দেরিই হয়ে গেল। বাইরে বেরিয়ে দেখি বদ্রীনাথের মন্দিরে তীর্থযাত্রীদের বেশ বড় লাইন পড়ে গেছে। আমার সহযাত্রীদের মধ্যে কয়েকজন বদ্রীনাথজীর দর্শন পাওয়ার জন্য উদগ্রীব। আমার অবশ্য সে বালাই নেই, তাই তাদের মন্দিরে ঢোকার লাইনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে, মন্দিরের আশপাশে ঘোরাঘুরি করে কিছু ছবি তুললাম আর স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে জেনে নিলাম মানা গ্রাম হয়ে বসুধারা জলপ্রপাত পর্যন্ত যাবার পথের হালহকিকত। যা বুঝলাম মানা পর্যন্ত রাস্তা খুবই সোজা, একেবারে পাকা মোটর চলার রাস্তা। কিন্তু এরপরের অংশটা নিয়েই হল সমস্যা। দেখলাম স্থানীয় লোকজনের মানা থেকে বসুধারা পর্যন্ত রাস্তা সম্পর্কে কোন অভিজ্ঞতাই নেই। ভাষা-ভাষা ভাবে যা বলছে, তার থেকে আমরাই বেশি জানি। বসুধারা প্রপাত সম্পর্কে ঠিকঠাক হদিশ পাওয়ার সেরা জায়গা ছিল মন্দিরের পাশেই সাধুদের আখড়াগুলো। কিন্তু সেটা আর আমরা জানব কি করে? যাই হোক ততক্ষণে ধার্মিক বন্ধুদের বদ্রীনাথজীর দর্শন করা হয়ে গেছে। পেটে সবারই তখন চনচনে খিদে। সবাই মিলে একটা খাবার দোকানে ঢুকে, ছোলা-পুরিতে খিদে মিটিয়ে রওনা দিলাম মানা হয়ে বসুধারার পথে।
মানার পথ থেকে দেখা বদ্রীনাথ
বদ্রীনাথকে পিছনে ফেলে, মানার আরও কাছাকাছি
প্রকৃতির মাঝে বিহ্বল
আমাদের যাত্রাপথের প্রহরী
বদ্রীনাথ থেকে মানা গ্রাম তিন কিলোমিটার পাকা রাস্তা। প্রথমে ভেবেছিলাম মোটর রাস্তাই যখন আছে, তখন আর মানা অবধি শুধুশুধু হাঁটার পরিশ্রম না করে একটা মোটর ভাড়া করে চলে যাব। কিন্তু মোটরগুলো এমন বেয়াড়া রেট চাইতে লাগল যে শেষ পর্যন্ত হেঁটে যাওয়ার সিদ্ধান্তই নিয়ে নিলাম। হাঁটতে শুরু করে দেখলাম রাস্তা বেশ ভালোই, চড়াই উৎরাইও একেবারে নেই বললেই চলে। মানার আগে একটা ইন্ডো টিবেটান বর্ডার পুলিশের স্টেশন পড়ে। এরপরেই একটু উঁচুতে পাহাড়ের গায়ে মানা গ্রাম। মানা গ্রামে ঢুকে ঝরনার ঠান্ডা জল আর স্থানীয় লোকেদের বানানো অদ্ভূত স্বাদের চা খেয়ে আমরা হাঁটা দিলাম গ্রামের শেষ প্রান্তে ভিমপুলের দিকে। ভিমপুল পার হয়েই বসুধারার পথ শুরু। ডানপাশে পাহাড়, বাঁদিকে খাদের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে অলকানন্দা। দেখলাম পাহাড়ের পাথরের গায়ে খোদাই করে লেখা “বসুধারা – ৬ কিলোমিটার”, নিচে তীরচিহ্ন দিয়ে পথ নির্দেশ করা। ভাঙাচোরা পাথুরে রাস্তা, বেশ ভাল রকম চড়াই। একটু এগিয়ে যেতে বুঝলাম আমার সহযাত্রীরা পিছিয়ে পড়েছে। পরে জেনেছিলাম ওই রাস্তা দেখে ওরা শুরুতেই রণে ভঙ্গ দিয়েছিল। আমার ততক্ষণে বসুধারায় যাবার জেদ চেপে গেছে। এতক্ষণ পাহাড়ী রাস্তায় চলার সঠিক পদ্ধতির উপর অনেক অযাচিত উপদেশ শুনছিলাম। কেউ কেউ আবার বসুধারায় না যাবার মহামূল্যবান উপদেশও বিতরণ করছিলেন। এবার সেই সব জ্ঞানী হিতৈষীদের ক্রমশই পিছনের ফেলে আসা পথে অদৃশ্য হয়ে যেতে দেখে, আমার বসুধারা দেখার উৎসাহ আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেল। হাঁটার পরিশ্রমে এর মধ্যেই ঘামতে শুরু করে দিয়েছি, তাই গায়ের সোয়েটারটা খুলে পিঠে বেঁধে নিয়ে এগিয়ে চললাম বসুধারার পথে।
মানা গ্রামের পারিপার্শ্বিক
এটাই বসুধারার যাবার পথ
একে যদি রাস্তা বলেন তো রাস্তা, পাহাড় বলেন তো পাহাড়। পাহাড়ের গা বেয়ে পায়ে চলে চলে একটা পথের মত হয়ে গেছে। রাস্তার প্রথম দিকটায় ধ্বসে যাওয়া জায়গাগুলো পাথর ফেলে একটু চলার উপযোগী করে দেওয়া আছে, কোথাও বা পাথর গেঁথে একটু বসার মত একটু জায়গা করা আছে। কিন্তু কিছুটা এগোনোর পর পাহাড়ের গায়ে শুধু একটা পায়ে চলার চিহ্ন মাত্র। উচ্চতা যে খুব দ্রুত বাড়ছে, সেটা দুটো জিনিসেই বুঝতে পারছিলাম। প্রথম দিকে আকাশে কিছু পাখির ওড়াউড়ি ও ডাকাডাকি দৃষ্টি ও কর্ণগোচর হচ্ছিল, কিন্তু এখন নিচে প্রবহমান অলকানন্দার ক্ষীণ কল্লোল ধ্বনি ছাড়া আর একটা শব্দই কানে আসছে; সেটা আমার হাপরের মতো নিশ্বাসের শব্দ। এত কম সময়ের মধ্যে এত প্রবল অক্সিজেন ঘাটতির মধ্যে পড়তে হবে তা কল্পনাও করতে পারিনি আগে। শেষে এমন অবস্থা কয়েক পা করে চলি আর হাঁপাতে হাঁপাতে বসে পড়ি। মিনিট খানেক বসে, একটু দম নিয়ে ফের পা চালাই। এভাবেই হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে চলতে চলতে পাহাড়ের একটা বাঁক ঘুরেই দেখি সামনে এক মূর্তিমান বিপদ, বিশ ফুটের বেশি চওড়া তুষার প্রপাত। এটা আসলে একটা ঝরনার পথ ধরে নেমে আসা ক্ষুদে হিমবাহ বা পাহাড়ের মাথায় থাকা বড় হিমবাহের লেজ। পুরোটাই এবড়ো খেবড়ো নরম বরফ আর তার ওপর পুরু ধুলোমাটির আস্তরণ। নিচের দিকটা আবার গলে গলে ঝরনা হয়ে ঝরছে। আমার জুতোটা আবার ফ্ল্যাট সোল স্পোর্টস শু, দৌড়ানোর জন্যে খুব ভাল কিন্তু বরফের উপর দিয়ে চলার পক্ষে একেবারেই উপযুক্ত নয়। তাও যা থাকে কপালে ভেবে মিনি গ্লেসিয়ারটার উপর পা রাখলাম। মাঝ বরাবর গিয়ে যা ভয় পেয়েছিলাম তাই হল। পা হড়কে পড়লাম আর পিচ্ছিল বরফের ঢাল বেয়ে নিচে খাতের দিকে হড়কাতে লাগলাম। কোন উপায় নেই বুঝে, সজোরে গ্লাভস বিহীন হাতের আঙ্গুলগুলো চালালাম নরম বরফের ভিতর। এবার নিচে হড়কানো আটকাতে পারলাম, কিন্তু ততক্ষণে এমন একটা খাঁজের মধ্যে এসে পড়েছি যে ওঠার কোন উপায় দেখছি না। সঙ্গে একটা লাঠিও নিয়ে বেরোইনি যে সেটার সাপোর্ট নিয়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করব। এদিকে হাতের আঙুলগুলো ঠান্ডায় ক্রমশ অসাড় হয়ে আসছে। এমন সময় এক নেংটি পরা সাধুবাবার আবির্ভাব। সাধুবাবা কৌপীনসার হলে কি হবে, হাতে রয়েছে একটি মোক্ষম লোহার বাঁটওয়ালা দাদুর ছাতা টাইপের ছাতা। এটা বাবাজীর ছাতা কাম ওয়াকিং স্টিক। এটা কাজে লাগিয়ে সাধুবাবা “পকড় কে রহনা, পকড় কে রহনা” করতে করতে এসে আমার দিকে ছাতাটা বাড়িয়ে দিলেন। ছাতাকে লাঠি হিসেবে ব্যবহার করে, এবার আমি খাঁজ থেকে বেরিয়ে এলাম। অবশিষ্ট রাস্তা আমরা একসাথে পাড়ি দিলাম।
এবার এই তুষারপ্রপাত পার হও
এখানেই আমি আর একটু হলেই মরতে বসেছিলাম
পথের উচ্চতা বাড়ছে
বাকি পথটুকুতে চড়াইটা আর তত কষ্টকর লাগছিল না। অবশেষে এসে পৌঁছালাম বসুধারা প্রপাতের নিচে। পাহাড়ের গায়ে চারশ ফুট ওপর থেকে অলকাপূরী হিমবাহ গলে আছড়ে পড়ছে দুধ সাদা জলের ধারা। জলের বেশ কিছুটা অংশ অ্যাটমাইজ হয়ে কুয়াশার আকারে ছড়িয়ে পড়ছে তাই জলপ্রপাতের শব্দ কিছুটা কম। নিচে যেখানে জল পড়ছে তার চারপাশেও প্রচুর দানাদার মুচমুচে বরফ জমে আছে। একটু দম নিয়েই, প্রথমে প্রপাতের জলে হাত মুখ ধুয়ে প্রাণ ভরে জল খেয়ে তেষ্টা মেটালাম। ওহ্ কি মিষ্টি জল। এত মিষ্টি জল আমি জীবনে আর কখনো খাইনি। এবার কিছু ফটো তোলার পালা, এই সময়েই সাধুবাবা বরফের উপর বসে তার সুপারম্যান মার্কা পোজটা দিলেন আর আমিও তা ক্যামেরা বন্দি করে ফেললাম। এরপর আমার সুপারম্যান সাজার পালা, ক্যামেরা সাধুবাবার হাতে। বসুধারার পাশে এক গুহাতে একজন মৌনি সাধুবাবা বাস করেন। তিনি মুখে একটি শব্দও উচ্চারণ করেন না। তবে তাঁর একটি চ্যালা আছে, সে কথাবার্তায় বেশ টগবগে। তার দৌলতে ফুটন্ত গরম এলাচ চা খেলাম বসুধারা পাশে পাথরের উপর বসে। এবার ফেরার পালা। ফেরার রাস্তায় নামল পিটপিট করে বৃষ্টি। এদিকে বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে, অন্ধকার নামার আগে যেভাবেই হোক মানা গ্রামে পৌঁছতেই হবে। অতএব সাধুবাবার আইডিয়া নিয়ে দৌড়ে দৌড়ে নামা শুরু করলাম। দৌড়ানোয় আমার জুতোটাও যারপরনাই সাহায্য করতে লাগল। শুধু কেন যে পড়ে হাত পা ভাঙল না, সেটাই আমার কাছে আজ অবধি বোধগম্য হল না। মানায় এসে দেখি আমার বাকি সঙ্গীরা, আমি মানাতেই আছি ধরে নিয়ে এদিক ওদিক খোঁজা খুঁজি করছে। বসুধারা ঘুরে এলাম শুনে তাদের চক্ষু চড়কগাছ। বলে “ওই রাস্তা দিয়ে গেলে কি করে? বসুধারায় পোঁছাতে পেরেছ তো আদৌ?” পরে ছবির প্রিন্ট দেখিয়ে ওদের বিশ্বাস করাতে পেরেছিলাম, যে আমি সত্যিই বসুধারায় গেছি।
অবশেষে বসুধারায়
স্বর্গারোহনীর পথ, বসুধারা থেকে দেখা
সুপারম্যানের ভূমিকায় সাধুবাবা
এবার আমার রাজা সাজার পালা
কাছ থেকে বসুধারার নয়নমনোহর রূপ
কুয়াশার মত ছড়িয়ে পড়ছে জলকণা
আমাদের পথ চলার নীরব সাক্ষী
গুগল আর্থ ভিউ-তে বসুধারা