শুক্রবার, ২৬ মার্চ, ২০১০

হাঁটাপথে লাভা থেকে রিশপ

সবার সাবধানবাণী ও উপদেশ উপেক্ষা করেই ২০০৮ সালের পুজোটা কাটালাম দার্জিলিং-এ। প্রথম দিন থেকেই আমাদের সঙ্গী হয়েছিল কুয়াশা আর মেঘ। দ্বিতীয় দিনে সাথি হল বৃষ্টি। তাই তৃতীয় দিনে দার্জিলিং থেকে কালিম্পং হয়ে চলে এলাম লাভায়। লাভায় এসে মনে হল আমাদের উপর প্রকৃতি দেবীর ক্রোধ বোধহয় কিঞ্চিত প্রশমিত হয়েছে। তাই পরের দিন রিশপ পর্যন্ত পাহাড়ী পথ পায়ে হেঁটে অর্থাৎ ট্রেক করে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। লাভা থেকে ঋষভ ট্রেকিং করে চলার পথে যা দুচোখে পড়ল, চেষ্টা করলাম যতটুকু পারি ক্যামেরায় বন্দি করে রাখতে।

লাভার সকাল

রোদে ঝলমল করছে বৌদ্ধমঠ

এই রে কুয়াশা আসছে!

রিশপের রাস্তা থেকে। কুয়াশারা ওখানেই পড়ে থাক!

লাভার নৈসর্গিক ল্যান্ডস্কেপ। এখানেও সঙ্গীন উঁচিয়ে মোবাইল টাওয়ারের দাপট...

পার্বত্য নিসর্গের মাঝে...

একটু 'জুম' করে...

চলো, হারিয়ে যাই...

কুয়াশাটা দেখছি পিছু ছাড়বে না...

আমি এখানে---

রিশপে কুয়াশা জব্দ...



রিশপে পাহাড়ী ফুলের ডালি...

ক্লান্ত পায়ে লাভায় ফিরে...

রিশপ লাভা থেকে অনতিদূরে অবস্থিত একটি পাহাড়ী গ্রাম, যা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নানা পাহাড়ী ফুলের প্রাচুর্যের কারণে, একটি নেচার রিসর্টের মর্যাদা পেয়েছে। লাভা থেকে ঋষভ যাবার পথ, পাহাড়ী কাঁচা রাস্তা, যা দিয়ে শুকনো মরসুমে, জিপ জাতীয় গাড়ী চলতে পারে। কিন্তু রাস্তার দুধারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে হেঁটে যাওয়া, জিপের প্রানান্তকর ঝাঁকুনির থেকে অনেক বেশী উপভোগ্য। লাভা সম্পর্কে জানতে নিচের ওয়েব সাইটটা দেখুন:
http://bengali.webdunia.com/entertainment/tourism/bangladarshan/0704/22/1070422015_1.htm

সোমবার, ২২ মার্চ, ২০১০

কিছু এলোমেলো ছবি

গত দশবছরে নানা হুজুগে অনেক ছবি তুলেছি। বেশির ভাগ ছবিই দলবদ্ধতার জোরে ঠাঁই করে নিয়েছে কোন না কোন ফটো অ্যালবামে। কিন্তু কিছু মুখচোরা ছবি থেকে গেছে যাদের স্বজাতির লোকবলের অভাবে, ঠাঁই পায়নি কোন অ্যালবামের পাতায়; একা একা ব্রাউনপেপারের খামের মধ্যে দিন কাটানোই যেন তাদের ভবিতব্য হয়ে গিয়েছিল। কাল ঝোঁকের মাথায় ধুলো ঝেড়ে এদের জড়ো করে নিয়ে বসলাম স্ক্যানে চাপাতে; উদ্দেশ্য এইসব ঘরছাড়াদের একটা স্থায়ী ঠিকানা দেওয়া। সেই সব ছবিগুলোই শেয়ার করলাম এখানে। কিছু ছবি প্রায় দশ বছরেরও বেশি পুরনো, কমদামের কালার ফিল্মে তোলা, সস্তা ম্যানুয়াল যন্ত্রে প্রিন্ট করা। তাই গ্রেন ও রঙের তারতম্য এই ছবিগুলোর পাকাপোক্ত বৈশিষ্ট। দেখুন কেমন লাগে।

দুর্গাপুরে দামোদরের তীরে

দুর্গাপুর ব্যারেজ

দক্ষিণেশ্বরের গঙ্গায় সূর্যাস্ত

গঙ্গাবক্ষ থেকে হাওড়া স্টেশন

কলকাতায় দুর্গাপূজার মণ্ডপ

অযত্নে ফুটে থাকা ফুলেরা

ঝরে পড়া কাগজফুল (বোগেনভিলিয়া)

মান্না দে-এর কণ্ঠে হরিবংশ রাই বচ্চনের ‘মধুশালা’

যাঁরা হিন্দি সাহিত্য নিয়ে কিছু খোঁজখবর রাখেন, হরিবংশ রাই বচ্চনের নাম তাঁরা প্রায় সবাই জানেন বলে মনে হয়। হয়তো এটাও জানেন যে হরিবংশ রাই বচ্চনই হলেন বিখ্যাত বলিউড স্টার অমিতাভ বচ্চনের বাবা। তবে ছেলে যতই বিখ্যাত হোক না কেন, হরিবংশ রাই-এর প্রধান পরিচয় কিন্তু তাঁরই লেখা একটি কাব্যগ্রন্থ, যার নাম ‘মধুশালা’। এই সেই বিখ্যাত রচনা যা ১৯৩৫ সালে প্রকাশিত হওয়ার সাথেসাথেই হরিবংশ রাইকে এনে দিয়েছিল খ্যাতির পাদপ্রদীপের আলোয়। এই কাব্যগ্রন্থটি আজও হিন্দি সাহিত্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টিগুলির মধ্যে অন্যতম হিসাবে পরিগণিত হয়।

এবার আসি ‘মধুশালা’র ব্যাখ্যায়। মধুশালা (Hindi: मधुशाला) শব্দটি এখানে ব্যবহৃত হয়েছে, পানশালা অর্থে। এই বইটিতে রয়েছে হরিবংশ রাই বচ্চনের রচিত মোট ১৩৫টি চার লাইনের কবিতা, যাকে আরবীতে রুবাই (رباعی) বা বহুবচনে রুবাইয়াত (رباعیا) বলা হয়ে থাকে। কবিতাগুলির আলাদা করে কোন নাম দেওয়া হয়না, শুধু সংখ্যা দিয়ে এগুলিকে চিহ্নিত করা হয় শ্লোক বা আয়াতের মতো। এই ১৩৫টি রুবাই-এর প্রত্যেকটিই সমাপ্ত করা হয়েছে ‘মধুশালা’ শব্দটি দিয়ে। এই সুফী ভাবনা ও গভীর দার্শনিক বোধের দ্বারা প্রভাবিত এই কবিতাগুলিতে, কবি হরিবংশ রাই বচ্চন জীবনের জটিল ঘাতপ্রতিঘাতকে মোট চারটি প্রতীকী উপাদান – মধু, মদিরা, সাকি ও পেয়ালা এবং অবশ্যই মধুশালা, যা কিনা প্রতিটি রুবাইয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তার সাহায্যেই ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। এই metaphor গুলি মধুশালার প্রায় সবকটি রুবাইতেই ঘুরে ফিরে আসতে দেখি আমরা। মধুশালার সাহিত্য প্রকাশভঙ্গি হিন্দি সাহিত্যের ছায়াবাদী ধারার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হিসাবে গণ্য করা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মধুশালা প্রকাশিত হওয়ার পর এতে মদ্যপানের প্রচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ ঊঠেছিল। হরিবংশ রাই তাঁর নিজের জীবনীতে লিখেছেন, মহাত্মা গান্ধী মধুশালার কবিতাগুলি শোনার পরে এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভ্রান্ত বলে মন্তব্য করেন।

ওমর খৈয়ামের ‘রুবাইয়াত’ অনুবাদ করতে গিয়ে, গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন হরিবংশ রাই বচ্চন। তারই পরিণতিতে তাঁর হাত থেকে বেরিয়ে আসে রুবাইয়াতের ট্রিলজি (Trilogy), যার প্রথমটিই হল মধুশালা। পরের দুটির নাম যথাক্রমে মধুবালা (১৯৩৬) ও মধুকলস (১৯৩৭)। মধুশালা প্রকাশিত হওয়ার পরে বিভিন্ন কবিসম্মেলনে কবির স্বকণ্ঠে কবিতাটির সঙ্গীতময় আবৃত্তি শোনার জন্য মানুষ মুখিয়ে থাকত। মধুশালা আজও সর্বাধিক বিক্রিত হিন্দি কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে অন্যতম। এখনও প্রতি বছর এর দুই থেকে তিনটে করে সংস্করণ প্রকাশিত হয়। মধুশালার রুবাইগুলি আবৃত্তি, গান ও কোরিওগ্রাফির মধ্যে দিয়ে বহুবার উপস্থাপনা করা হয়েছে। প্রবাদপ্রতিম কণ্ঠশিল্পী মান্না দের কণ্ঠে মধুশালার নির্বাচিত কুড়িটি স্তবকের রেকর্ডিং প্রকাশ করেছিল HMV। এই রেকর্ডে মধুশালার প্রথম স্তবকটি শোনা যায় কবি হরিবংশ রাই বচ্চন-এর স্বকণ্ঠে। পরেরগুলি গেয়েছেন মান্না দে, তাঁর স্বকীয় শৈলীতে।

মান্না দের কণ্ঠে শুনুন মধুশালা:

অথবা ডাউনলোড করে নিন এখান থেকে:  http://soundcloud.com/jaybrata/madhushala/download

মধুশালার সিডি কভার

মধুশালা সম্পর্কে আরও জানুন: http://en.wikipedia.org/wiki/Madhushala

মধুশালা পড়ুন: http://www.manaskriti.com/kaavyaalaya/mdhshla.stm

মান্না দের গাওয়া মধুশালার কুড়িটি স্তবকের অনুবাদ: http://reocities.com/Paris/2583/madhushaalaa.html

শনিবার, ২০ মার্চ, ২০১০

পল রোবসনের কণ্ঠে “Old Man River” : সংগীতের ক্রমবিবর্তন

পল রোবসন 
জগদ্বিখ্যাত মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ প্রতিবাদী কণ্ঠশিল্পী পল রোবসনের নাম, প্রতিটি সংগ্রামী মানুষেরই জানা। তাঁর গাওয়া একটি বিখ্যাত গান “Old Man River” গোটা পৃথিবীর গণসঙ্গীতের ধারাকে প্রভাবিত করেছে। বাংলা ভাষায় ভূপেন হাজারিকা সহ একাধিক শিল্পীর কন্ঠে এই গানটির অনুপ্রেরণায় রচিত “বিস্তীর্ণ দুপারে” হয়তো অনেকেই শুনে থাকবেন। আমি এখানে মূল “Old Man River” গানটি পল রোবসনের নিজের কণ্ঠে কিভাবে পরিবেশন করতেন তা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। এই গানটি রোবসন প্রায় সমস্ত সঙ্গীতজীবন জুড়ে একাধিক বার গেয়েছেন। এখানে আমি প্রথম যে ট্র্যাকটি দিয়েছি সেটি ১৯২৮ সালে গাওয়া। এর পরেরটি ১৯৩৬ সালে গাওয়া। তৃতীয়টির রেকর্ডিং-এর সময় সঠিক ভাবে জানা না থাকলেও, যে এটি ১৯৩৬ ও ১৯৫৮ সালের মাঝেই করা, এবিষয়ে আমি নিঃসন্দেহ। কারণ সর্বশেষ ট্র্যাক যেটি ১৯৫৮ সালে লাইভ রেকর্ডেড, তাতে কন্ঠে বয়সের ছাপ এর থেকে অনেক বেশী, আবার ১৯৩৬ সালের রেকর্ডিং-এ কণ্ঠ এর থেকে অপেক্ষাকৃত নবীন। যাই হোক, গানগুলি শোনার সময় যে দিকটায় খেয়াল রাখবেন তাহলো, সময়ের সাথে সাথে নিগ্রো স্পিরিচুয়ালের আবরন ভেঙে গানের উপস্থাপনায় প্রতিবাদের সুর কিভাবে সোচ্চার হচ্ছে রোবসনের কণ্ঠে। এবার শুনতে থাকুন।

Paul Robeson – Old Man River (1928)

Paul Robeson – Old Man River (1936)

Paul Robeson – Old Man River (undated)

Paul Robeson – Old Man River (Carnegie Hall 1958)

পাদটীকাঃ পল রোবসন তাঁর সঙ্গীতজীবন শুরু করেন, নিগ্রো স্পিরিচুয়াল গান দিয়ে। তখন মার্কিন যুক্তরাজ্যে বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিবাদ করতে কৃষ্ণাঙ্গরা বড় একটা সাহস পেতেন না। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযোগ্য যে, পল রোবসন কলেজ দলে খেলতে গিয়ে, নিজের দলেরই শ্বেতাঙ্গ সদস্যদের হাতে নির্যাতিত হয়েছিলেন। তারা মেরে তাঁর নাক ভেঙে দেয় ও কাঁধের হাড় ডিসলোকেট করে দেয়। এরকম অবস্থায় পল তাঁর নিগ্রো স্পিরিচুয়াল গানের মধ্যে দিয়েই কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের দুঃখ-যন্ত্রণার কথা তুলে ধরতে থাকেন। ক্রমে এর মধ্যে সূক্ষ্মভাবে প্রতিবাদের সুর ফুটিয়ে তুলতে থাকেন। কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার অর্জনের সংগ্রাম ক্রমশ দানা বাধতে থাকলে পলের কণ্ঠে প্রতিবাদের সুরও ক্রমশ সোচ্চার হতে থাকে। এখানে তৃতীয় গানটি সম্ভবত নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সর্বোচ্চ সময়ে গাওয়া। লক্ষ করুন এর স্বরক্ষেপণ। লক্ষ করুন ক্রোধে ও যন্ত্রণার প্রকাশ।

আউলি স্কি ভিলেজে একদিন

এই প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস করতে করতে, চলুন একটু ছবির সফরে, বরফের সাম্রাজ্য, স্কি ভিলেজ আউলিতে। ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের একদম উত্তরপ্রান্তে, অসংখ্য তুষারমন্ডিত শৃঙ্গে ঘেরা গাড়োয়াল হিমালয়ের কোলে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আড়াই থেকে তিন হাজার মিটার উচ্চতায়, ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম আউলিকে ঘিরে তৈরী হয়েছে একটি আন্তর্জাতিক মানের স্কি ভিলেজ। প্রতি বছর শীতকালে আউলির পাহাড়ি ঢালগুলো যখন সাদা বরফের পুরু আস্তরণে ঢেকে যায়, তখন আউলির স্কি রিসর্টে জমে ওঠে স্কি শেখার আসর আর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের স্কি প্রতিযোগিতা। বছরদুয়েক আগে গিয়েছিলাম আউলিতে, ভেবেছিলাম স্কিতে একটু হাত মক্স করবো। কিন্তু স্কি তো শেখা হলো ছাই, শুধু সারাদিন ধরে ক্যামেরার সাটারটা ব্যস্ত রেখে গেলাম। সেই সব ছবিরই কিছু টুকরো টাকরা এখানে দিলাম, এই গরমে চোখের শান্তি তো হবে। প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি, আউলির ১৮০° খোলা দিগন্ত থেকে হিমালয়ের যে তুষার শৃঙ্গগুলি দেখা যায়, সেগুলি হল - নন্দাদেবী, মানা পর্বত, কামেট, দ্রোণাগিরি, ত্রিশুল (কিছুটা) ইত্যাদি। আউলি যাওয়ার সহজ পথ - কলকাতা থেকে হরিদ্বার ট্রেনে (দুন ও ঊপাসনা এক্সপ্রেস) - হরিদ্বার থেকে যোশীমঠ বাস বা রিজার্ভ কারে (সারাদিন লেগে যাবে) - যোশীমঠ থেকে পৃথিবীর উচ্চতম রোপওয়েতে চেপে আউলি (স্কি সিজনে গেলে ভুলেও গাড়িতে যাবার চেষ্টা করবেন না। শেষের দিকে অনেকটা চড়াই পথ বরফের উপর পায়ে হেঁটে যেতে বাধ্য হবেন, ঠিকঠাক স্নোবুট না থাকলে ভোগান্তির শেষ থাকবে না। তাছাড়া রোপওয়ে থেকে বরফ ঢাকা হিমালয়ের যে সৌন্দর্য চোখে পড়বে, তার তুলনা হয় না।)। আউলিতে একটাই থাকার ঠিকানা, তা হলো জিএমভিএন-এর স্কি রিসর্ট। তাই আগে থাকতে ঘর বুক করে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। যোশিমঠেও জিএমভিএন-এর হোটেলে থাকাই সুবিধাজনক। হরিদ্বারে অগুনতি হোটেল, শুধু একটু দেখে শুনে নিলেই হলো। জিএমভিএন-এর আন্তর্জাল ঠিকানা http://www.gmvnl.com/। ওখানে অনলাইন হোটেল বুকিং ও স্কি প্রশিক্ষনে যোগ দেবার ব্যবস্থা আছে। GMVN-এর কলকাতা অফিসের ঠিকানা:

Garhwal Mandal Vikas Nigam Ltd.
Room no. 224, Marshall House 33/1
2nd floor Netaji Subash Road
Kolkatta - 700001
Tel / Fax : 033-22315554
Email: prokolkatta@vsnl.net

আর একটা কথা, স্কি-এর মরশুমে আউলিতে গেলে বরফে পরার ঘন কালো রোদচশমা আর ভাল শীতের পোষাক নিতে কোনভাবেই ভুলবেন না যেন। বরফে হাঁটার জুতো, ওখানেই ভাড়া পেয়ে যাবেন।

যাবার পথে
যাবার পথে

পাহাড়ে ঘেরা দিগন্ত
পাহাড়ে ঘেরা দিগন্ত

বরফের সাম্রাজ্যের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাবে রোপওয়ে
বরফের সাম্রাজ্যের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাবে রোপওয়ে

পরিবেশবন্ধু বিকল্প বিদ্যুতের খোঁজে
পরিবেশবন্ধু বিকল্প বিদ্যুতের খোঁজে

বরফে মোড়া পাহাড়ি প্রান্তর
বরফে মোড়া পাহাড়ি প্রান্তর

এটা স্কি খেলার মাঠ
এটা স্কি খেলার মাঠ ;)

রোপওয়ে লান্ডিং স্টেশান
রোপওয়ে লান্ডিং স্টেশান

আউলির দিগন্ত এরকমই
আউলির দিগন্ত এরকমই

সাদা রঙ সবুজকে হারিয়ে দিতে পারেনি
সাদা রঙ সবুজকে হারিয়ে দিতে পারেনি

পাহাড়ের ঢাল
পাহাড়ের ঢাল

আমি আছি
আমি আছি!

ঘরের জানলা থেকে
ঘরের জানলা থেকে

নিচে পাহাড়ি গ্রাম
নিচে পাহাড়ি গ্রাম

আর একটু জুম করে
আর একটু জুম করে

ভাষা খুজে পাইনা
ভাষা খুঁজে পাইনা

শিক্ষক ও ছাত্র
শিক্ষক ও ছাত্র

ওই যে ওরা মাঠে নেমে পড়েছে
ওই যে ওরা মাঠে নেমে পড়েছে

এরা আমায় নিরন্তর হাতছানি দেয়
এরা আমায় নিরন্তর হাতছানি দেয়। আবার কবে আসবে, আমাদের কোলে?

চেক/স্লোভাক ছবি Obchod na korze (দ্যা শপ অন মেইন স্ট্রীট)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার নাৎসি জার্মানি অধিকৃত স্লোভাকিয়া। নাৎসিদের ধামাধরা স্থানিয় ফ্যাসিস্ট বাহিনী এখন সর্বত্র দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। ছুতোর মিস্ত্রি অ্যান্টন ব্রিকো ওরফে টোনো, একদিকে দারিদ্র্য, আরেকদিকে মুখরা বৌয়ের আক্রমণে পুরোদস্তুর পর্যুদস্ত। কাজের সন্ধানে সে, এদিক সেদিক ঘুরঘুর করে, কিন্তু যুদ্ধের বাজারে কাজ পাওয়াই দুস্কর। তার ওপরে নিতান্ত মৃদুভাষী, শান্তিপ্রিয় টোনোর পক্ষে কাজের জন্য ফ্যাসিস্ট কর্তাদের উমেদারি করা নিতান্তই অসম্ভব মনে হয়। তবু বৌয়ের তাড়া খেয়ে সকালবেলা বাড়ি থেকে বার হয়, আর সারা দিন গোটা শহর ঘুরে, বিকেলবেলায় খালি হাতে বাড়ি ফেরে। টোনোর ভায়রাভাই সুযোগ বুঝে ফ্যাসিস্ট বাহিনীতে যোগ দিয়ে, ইতিমধ্যেই কমান্ডার হয়ে গেছে। টোনো তাকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করলেও টোনোর বৌ তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। টোনোর বৌয়ের আশা, তাকে ধরতে পারলে টোনোর একটা হিল্লে হয়ে যেতে পারে। কিন্তু টোনো তার ভায়রাভাইয়ের সংস্পর্শ, সর্বতোভাবে এড়িয়ে চলতে চায়। অবশেষে একদিন টোনোর ভায়রাভাই, নিজেই টোনোর বাড়িতে হাজির হলো, টোনোর জন্য একটা কাজের সুযোগ নিয়ে। কিন্তু কাজটা কি? স্লোভাকিয়ায় নাৎসি বাহিনীর হুকুমে শহরের 'আর্যকরন' করা হচ্ছে, অর্থাৎ কিনা ইহুদী মালিকানাধীন সমস্ত দোকানের দখল তুলে দেওয়া হচ্ছে 'আর্য' স্লোভাকদের হাতে। সেভাবেই 'আর্য' স্লোভাক হিসেবে টোনোকে দেওয়া হচ্ছে এক ইহুদী বৃদ্ধার সেলাইয়ের সরঞ্জাম বিক্রির দোকানের 'আর্যকরন'-এর দায়িত্ব। একটু বেশি মাত্রায় বাস্তববাদী টোনোর বৌ, এক কথায় প্রস্তাবটা লুফে নিল। পরিস্থিতির চাপে একপ্রকার নিমরাজি হয়েই টোনো এই কাজের দায়িত্ব নিতে রাজি হয়ে গেল। টোনো পরের দিন সেই ইহুদী বৃদ্ধার দোকানে পৌঁছে দেখল, বৃদ্ধা কানে খুব কম শোনেন, তার ওপরে বার্ধক্য জনিত মানসিক বিভ্রান্তির কারনে, বহির্জগতে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি সম্পর্কে সম্পূর্ণ উদাসীন অথবা প্রতিক্রিয়াহীন। বৃদ্ধা টোনোকে কাজের সন্ধানে আসা ব্যক্তি ভেবে, দোকানের কর্মচারির কাজে বহাল করেন। এই সময় ওই দোকানে উপস্থিত একজন ফ্যাসিস্ট বিরোধী সংগঠক, টোনোকে জানান যে, এই দোকান চালিয়ে বৃদ্ধার যেটুকু লাভ হয়, তাতে দোকানের রক্ষণাবেক্ষণের খরচই ওঠে না। বৃদ্ধার ভরণপোষণ চলে পুরোটাই ইহুদী সম্প্রদায়ের তোলা চাঁদার টাকায়। একথা শুনে টোনো আতঙ্কিত হয়ে দোকানের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চাইলে, ওই ভদ্রলোক তাকে এই বলে নিরস্ত করেন, যে ইহুদি সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে তাকে প্রতি সপ্তাহে সংসার চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ যোগান দেওয়া হবে, বিনিময়ে সে ওই দোকানের দায়িত্ব ছাড়বেনা ও ওই বৃদ্ধার কাছে কর্মচারি সেজে কাজ করে যাবে। এটা তাঁরা ওই বৃদ্ধার সুরক্ষার জন্যই করছেন, নাহলে টোনোর জায়গায় অন্য কেউ দোকানের দায়িত্ব নিলে, সেই ব্যক্তি ওই বৃদ্ধার প্রতি ততটা সদয় নাও হতে পারে। এরপর টোনো পুরোদস্তুর দোকানদারির কাজে লেগে পড়ে ও ধীরে ধীরে বৃদ্ধার জন্য তার মনে একটা নরম জায়গা তৈরী হতে থাকে। একসময় নিজের অজান্তেই ওই বৃদ্ধাকে ভালবেসে ফেলে টোনো। কিন্তু নাৎসিরা তো ইহুদিদের শুধু ব্যবসা-বানিজ্য থেকে সরিয়ে দিয়েই সন্তুষ্ট নয়, তারা চায় ইহুদিদের সমাজ থেকে এমনকি পৃথিবী থেকেও মুছে দিতে। তাই কিছুদিনের মধ্যেই নির্দেশ জারি হল, শহরের সমস্ত ইহুদিকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানোর। নির্দিষ্ট দিনে শহরের সমস্ত ইহুদীকে এসে হাজিরা দিতে হবে শহরের প্রধান রাস্তায়, যেখান থেকে তাদের পশুবাহী ট্রেনে বোঝাই করে পাঠানো হবে, বিভিন্ন কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে। কিন্তু বৃদ্ধা এই সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ নির্বিকার। টোনো এখন কি করবে? ওই অশক্ত বৃদ্ধাকে তুলে দেবে নাৎসিদের হাতে? লুকিয়ে রাখবে নিজের কাছে? ওই বাস্তববিচ্ছিন্না বৃদ্ধাকে নিয়ে কোথায় যাবে টোনো? সেটা জানতে হলে দেখতে হবে "Obchod na korze" বা "দ্যা শপ অন মেইন স্ট্রীট"। ছবির পরিচালনা করেছেন Ján Kadár এবং Elmar Klos। টোনোর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন Jozef Kroner এবং ইহুদী বৃদ্ধার ভূমিকায় Ida Kamińska। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৬৫ সালের ৮ই অক্টোবর। ১৯৬৬ সালের অস্কারে শ্রেষ্ঠ বিদেশী ছবির মর্যাদা লাভ করে এই ছবিটি। এছাড়া একাধিক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতায় পুরষ্কৃত হয়েছে ছবিটি। ছবিটি সম্পর্কে আরও জানতে দেখুন: http://www.imdb.com/title/tt0059527/ । ছবিটিকে চেক না স্লোভাক বলা হবে তা নিয়ে চেক ও স্লোভাক প্রজাতন্ত্র আলাদা হয়ে যাবার পর অনেক বিতর্ক হয়েছে। আমি সেই অহেতুক বিতর্কের মধ্যে না গিয়ে, একে চেক/স্লোভাক বলেই উল্লেখ করেছি।

দেশভাগের নেপথ্যে : বাংলার প্রেক্ষাপট

দেশভাগের সময় বাংলাভাগের প্রধান কারণ হিসাবে, মূলতঃ পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাশালী বর্ণহিন্দুদের, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সাথে ক্ষমতা ভাগ করে নেওয়ার অনীহাকে দায়ি করার একটি জনপ্রিয় প্রচার, মূলতঃ বাংলাদেশে ও পশ্চিমবঙ্গের কিছু তথাকথিত বামপন্থি বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে সক্রিয় আছে। আমি এখানে কিছু ঐতিহাসিক তথ্য বিশ্লেষণ করে, দেখাতে চেষ্টা করবো, বাংলাভাগের প্রকৃত পটভূমি কিভাবে রচিত হয়েছিল।

ব্রিটিশ শাসিত ভারতে, ১৯৩৫ সালের ভারত সরকার আইনের (Government of India act, 1935) আওতায়, বাংলায় যে প্রাদেশিক সংবিধান (Provincial Constitution) প্রযোজ্য হয়েছিল, সেখানে আইনসভা (Legislative Assembly) নির্বাচন সংক্রান্ত ধারায় একটি উল্লেখযোগ্য বৈষম্য লক্ষ করা যায়। বাংলার আইনসভার ২৫০টি আসন যে ভাবে ভাগ করা হয়েছিল তা হল :

১) ১১৭টি আসন কেবলমাত্র মুসলমান ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত মুসলমান প্রতিনিধিদের জন্য।
২) ৪৮টি আসন সাধারন জনতার ভোটে নির্বাচিত, বাংলায় বসবাসকারী যে কোন প্রতিনিধির জন্য।
৩) ৩০টি আসন সাধারন জনতার ভোটে নির্বাচিত হিন্দু তফসিলি প্রতিনিধিদের জন্য।
৪) ১৯টি আসন শিল্প ও বানিজ্যমহলের দ্বারা নির্বাচিত, তাদেরই প্রতিনিধিদের জন্য।
৫) ১১টি আসন বাংলায় বসবাসকারী ইউরোপিয়ানদের দ্বারা নির্বাচিত, তাদেরই প্রতিনিধিদের জন্য।
৬) ৮টি আসন শ্রমিকদের দ্বারা নির্বাচিত, তাদেরই প্রতিনিধিদের জন্য।
৭) ৫টি আসন জমিদারদের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জন্য।
৮) ৩টি আসন অ্যাংলোইন্ডিয়ানদের প্রতিনিধিদের জন্য।
৯) ২টি আসন ভারতীয় খ্রীষ্টানদের জন্য।
১০) ২টি আসন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
১১) ২টি মহিলাদের জন্য।
১২) ২টি মুসলমান মহিলাদের জন্য।
১৩) ১টি অ্যাংলোইন্ডিয়ান মহিলাদের জন্য।

এর ফল হিসাবে দেখা গেল, বাঙ্গালী হিন্দুরা সর্বাধিক ১১৭টি (২৫০ - ১১৭ - ১১ - ২ - ২ - ১) আসনে নির্বাচনী প্রতিযোগিতা করতে পারবে। এই ১১৭টির মধ্যেও আবার ৩০টি তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত ছিল, যা বাস্তব পরিস্থিতির সাথে আদৌ সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। অন্যদিকে বাঙ্গালী মুসলমানরা সর্বাধিক ২০৩টি (১১৭ + ৪৮ + ১৯ + ৮ + ৫ + ২ + ২ + ২) আসনে, যার মধ্যে ১১৭টি আসনের প্রার্থী, শুধুমাত্র মুসলমান ভোটারদের ভোটেই নির্বাচিত হবে। ১৯৩১ সালের আদমশুমারি অনুসারে দেখা যাচ্ছে, বাংলার মুসলমান জনসংখ্যার অনুপাত মোট জনসংখ্যার ৫২% থেকে ৫৪%-এর মধ্যে ছিল। সুতরাং ২০৩ - ১১৭ আসনের অনুপাত যে বাস্তব জনসংখ্যার অনুপাতের সঙ্গে সঙ্গতিহীন এবং অসৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পাশাপাশি বাংলায় ব্রিটিশদের জনসংখ্যার অনুপাত ০.০০০৪%-এরও কম হলেও, তাদের জন্য আইনসভার ৪% আসন সংরক্ষিত রাখা হয়েছিল।
বাঙ্গলার হিন্দুদের পক্ষে পরিস্থিতি আরও প্রতিকূল হয়, ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে পর, যখন দেখা গেল ১১৭টি আসনের সবকটিতেও হিন্দু প্রতিনিধিরা জিতে উঠতে পারে নি। তা স্বত্বেও ভারতের জাতীয় কংগ্রেস সর্ববৃহৎ দল হিসাবে আইনসভায় আত্মপ্রকাশ করে। তাদের পরেই ছিল মুসলিম লিগ এবং তৃতীয় স্থানে ছিল ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টি। এমতাবস্থায় একটি জোট সরকার অনিবার্য হয়ে পড়ে ও ফজলুল হক কংগ্রেসকে কোয়ালিশন সরকার গড়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু কংগ্রেস একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে, ক্ষমতা ভাগ করে নিয়ে কোয়ালিশান সরকার গড়তে অস্বীকার করে। ফলতঃ কৃষক প্রজা পার্টি, মুসলিম লিগের সঙ্গে কোয়ালিশান সরকার গড়তে বাধ্য হয় ও মুসলিম লিগের সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে, তাদের মূল সংস্কারমুখী কর্মসূচি থেকে দূরে সরে যায়। পরে ১৯৪১-এ মুসলিগের লিগের খপ্পর থেকে বেরিয়ে এলেও, ফজলুল হকের পক্ষে দেশভাগের প্রক্রিয়া রোখা আর সম্ভব হয় নি, কারণ তাঁর নিজের সংগঠন কৃষক প্রজা পার্টির বেশির ভাগটাই তখন মুসলিম লিগ গ্রাস করে নিয়েছে, এবং ব্রিটিশ সরকারও মুসলিম লিগের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার উদ্দেশ্যে বেআইনি উপায়ে বলপ্রয়োগ করা শুরু করেছে। এই অবস্থায় কিছু বর্ণহিন্দু ও তফসিলি হিন্দু প্রতিনিধিও, ক্ষমতার লোভ বা যে কারনেই হোক হক-লিগ মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। এভাবেই ১৯৩৫-এর ভারত সরকার আইন, বাঙ্গালি হিন্দুদের প্রায় সম্পূর্ণভাবে বাংলার রাজনৈতিক ক্ষমতার অংশীদারিত্ব থেকে বঞ্চিত করে। অন্যদিকে কংগ্রেসের ক্ষমতালোভী স্বার্থপরতা, বাঙ্গালীকে মুসলিম লিগের ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সামনে প্রতিরোধের শেষ সুযোগটুকু থেকে বঞ্চিত করে। আসামে কিন্তু কংগ্রেস কোয়ালিশান সরকারে গিয়ে ক্ষমতা ভাগ করে নিয়েছিল। তাই আসামের ঐক্য, শেষ পর্যন্ত বিপন্ন হয় নি।
এত প্রতিকূলতার মধ্যেও তখনও যে হিন্দু বাঙ্গালী দেশভাগের পক্ষ নেয়নি, তা কিন্তু শুধুমাত্র বাঙ্গলাকে ঐক্যবদ্ধ রাখার আশাতেই। কিন্তু ১৯৪৩ সালে ফজলুল হককে সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে বলপ্রয়োগ করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে ব্রিটিশ সরকার। ১৯৪৬-এর নির্বাচনে মুসলিম লিগ ক্ষমতা দখল করতে পারে, মূলতঃ ব্রিটিশ প্রভুর বদান্যতাতেই। এবার সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা বাড়িয়ে ১২১টি করা হয়, যার মধ্যে মুসলিম লিগ জয়লাভ করে ১১৪টিতে। ইউরোপিয়ান ও অ্যাংলোইন্ডিয়ানদের জন্য সংরক্ষিত আসনগুলি কাজে লাগিয়ে, লিগ সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয় ব্রিটিশ শাসক। মুখ্যমন্ত্রীর পদ নেন কুখ্যাত সোহরাওয়ার্দি। ১৬ই আগস্ট জিন্না Direct Action Day ঘোষনা করলে, সোহরাওয়ার্দি এই দিনটিকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষনা করেন, যাতে দাঙ্গা করতে সুবিধা হয়। ১৯৪৬-এর দাঙ্গার ভয়াবহতায় যে ঘৃণা, বিদ্বেষ ও অবিশ্বাসের আবহ তৈরী করেছিল, তারপরে আর হিন্দু বাঙ্গালির দেশভাগের কাছে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া কিছু করার ছিল না।

আইনস্টাইনের “স্পেশাল থিয়োরি অফ রিলেটিভিটি”, খুব সহজ কথায়

এই ইউটিউব ভিডিওটিতে, অ্যানিমেটেড কম্পিউটার গ্রাফিক্সের সাহায্যে, অত্যন্ত সহজ ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, আইনস্টাইনের "স্পেশাল থিয়োরি অফ রিলেটিভিটি"।

বিজ্ঞান কারে কয়!

তথাকথিত ধর্মীয় বিজ্ঞানের প্রচারকরা, বিজ্ঞান সম্পর্কে ক্রমাগত ধোঁয়াশা ও বিভ্রান্তি তৈরীর চেষ্টা সর্বত্র চালিয়ে যান এবং অন্তর্জালেও এটা সমানভাবে বর্তমান। এঁদের মূল উদ্দেশ্য হল মানুষের বিবেচনা-বুদ্ধিকে গুলিয়ে দিয়ে, ধর্মীয় মৌলবাদের কারাগারে তাকে বন্দি করা। এই ইউটিউব ভিডিওটিতে এদের মিথ্যা প্রচারের উপযুক্ত জবাব আছে বলে মনে হয়।

ক্রিয়েশনিজম ও ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনের স্বরূপ

আশা করি ভিডিওটা দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে, ক্রিয়েশনিজম ও ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন তত্ত্বের উদ্দেশ্য কি।

জীবনের উৎস সন্ধানে

১৪ই মার্চ - আইনস্টাইন দিবস

১৪ই মার্চ, মহাবিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের জন্মদিবস। ১৮৭৯ সালে আজকের দিনে জার্মানির উল্ম-এ এক ইহুদি পরিবারে তাঁর জন্ম। তাঁর আবিষ্কৃত আপেক্ষিকতাবাদের তত্ত্ব এবং ভর-শক্তি সমতুল্যতা সমীকরণ, তাঁর পরিচয়ের সাথে প্রায় একাত্ম হয়ে গেছে। তাঁর সারা জীবনব্যাপী, অসংখ্য গবেষণার মধ্যে, বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্যগুলি হল,-
১) সাধারণ আপেক্ষিকতা
২) বিশেষ আপেক্ষিকতা
৩) ব্রাউনীয় গতি
৪) আলোক তড়িৎ ক্রিয়া
৫) তরঙ্গ-কণা দ্বৈততা
৬) ভর-শক্তি সমতুল্যতা
৭) আইনস্টাইনের ক্ষেত্র সমীকরণ
৮) একীভূত ক্ষেত্র তত্ত্ব
৯) বসু-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান
১০) ইপিআর প্যারাডক্স

সবই ব্যাদে আছে ! - ড. মেঘনাদ সাহা

খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ড. মেঘনাদ সাহা একবার মাসিক ভারতবর্ষ পত্রিকায়, 'একটি নতুন জীবন দর্শন' (১৩ নভেম্বর, ১৯৩৮) শিরোনামের একটি প্রবন্ধে, কটাক্ষমূলক একটি উক্তি করেছিলেন। উক্তিটি হল -'সবই ব্যাদে আছ'! এই উক্তিটি নিয়ে অনিলবরণ রায় নামের এক হিন্দুত্ববাদী ব্যাপক জলঘোলা করা শুরু করলে, এর ব্যাখ্যায় মেঘনাদ সাহা যা বলেন, তা এখানে তুলে ধরছি।

"... প্রায় আঠারো বৎসর পূর্বেকার কথা। আমি তখন প্রথম বিলাত হইতে ফিরিয়াছি। বৈজ্ঞানিক জগতে তখন আমার সামান্য কিছু সুনাম হইয়াছে। ঢাকা শহরবাসী লব্ধপ্রতিষ্ঠিত এক উকিল আমি কি বৈজ্ঞানিক কাজ করিয়াছি তাহা জানিবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। আমি উৎসাহভরে তাহাকে আমার প্রথম জীবনের তদানীন্তন গবেষণা সম্বন্ধে সবিশেষ বর্ণনা দেই। তিনি দু-এক মিনিট পরপরই বলিয়া উঠিতে লাগিলেন, "এ আর নতুন কি হইল, এ সমস্তই ব্যাদ-এ আছে"। আমি দু একবার মৃদু আপত্তি করিবার পর বলিলাম, 'মহাশয় এ সব তত্ত্ব বেদের কোন অংশে আছে তাহা অনুগ্রহ পূর্বক দেখাইয়া দিবেন কি?' তিনি বলিলেন, "আমি তো ব্যাদ পড়ি নাই, কিন্তু আমার বিশ্বাস তোমরা নূতন বিজ্ঞানে যাহা করিয়াছ বলিয়া দাবি কর, তাহা সমস্তই 'ব্যাদে' আছে"।

বলা বাহুল্য যে, বিগত কুড়ি বৎসর ধরিয়া বেদ, উপনিষদ, পুরাণ ইত্যাদি সমস্ত হিন্দুশাস্ত্র এবং হিন্দু জ্যোতিষ ও অপরাপর বিজ্ঞান সম্বন্ধীয় প্রাচীন গ্রন্থাদি তন্ন তন্ন করিয়া খুঁজিয়া আমি কোথাও আবিষ্কার করিতে সক্ষম হই নাই যে, এই সমস্ত প্রাচীন গ্রন্থে বর্তমান বিজ্ঞানের মূলতত্ত্ব নিহিত আছে।

অনেকে মনে করেন, ভাস্করাচর্য একাদশ শতাব্দীতে অতিস্পষ্টভাবে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন, সুতরাং তিনি নিউটনের সমতুল্য। অর্থাৎ নিউটন আর নতুন কি করিয়াছে? কিন্তু এই সমস্ত "অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী" শ্রেণীর তার্কিকগন ভুলিয়া যান যে, ভাস্করাচর্য কোথাও পৃথিবী ও অপরাপর গ্রহ সূর্যের চারিদিকে বৃত্তাভাস (elliptical) পথে ভ্রমণ করিতেছে - একথা বলেন নাই। তিনি কোথাও প্রমাণ করেন নাই যে, মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ও গতিবিদ্যার নিয়ম প্রয়োগ করিলে পৃথিবীর এবং অপরাপর গ্রহের পরিভ্রমণপথ নিরূপণ করা যায়। সুতরাং ভাস্করাচার্য বা কোন হিন্দু, গ্রীক বা আরবী পণ্ডিত কেপলার, গ্যালিলিও বা নিউটনের বহু পূর্বেই মাধ্যাকর্ষণতত্ত্ব আবিস্কার করিয়াছেন, এইরূপ উক্তি করা পাগলের প্রলাপ বই কিছু নয়। ..."

যারা প্রতিনিয়ত বেদ-বাইবেল-কোরান প্রভৃতি ধর্মীয় পুস্তকের নানা কোনাকাঞ্চিতে আধুনিক বিজ্ঞানের সন্ধান করেন, তাদের আমি ড. মেঘনাদ সাহার হিন্দু ধর্মে-বেদ-বিজ্ঞান সম্পর্কিত চিত্তাকর্ষক বাদানুবাদটি সংগ্রহ করে পড়তে অনুরোধ করি। লেখাটি এখনো যথেষ্ট আধুনিক ও প্রাসঙ্গিক।

আপ্পাচান ও তাঁর নারকেল গাছে ওঠার যন্ত্র

ভারতের কেরালা রাজ্যনিবাসি এম জে জোসেফ আপ্পাচান তৈরী করেছেন এই আশ্চর্য যন্ত্র। এই সহজ এবং নিরাপদ যন্ত্রটির মধ্যে রয়েছে, পা রাখার জন্য ইস্পাতের তৈরী দুটি প্যাডেল, যা জোড়া রয়েছে ধাতব তারের মাধ্যমে। এই যন্ত্রের সাহায্যে ৪০ মিটার উঁচু নারকেল গাছে, যে কেউ উঠে পড়তে পারেন মাত্র ২ থেকে ৩ মিনিটের মধ্যে। স্বাভাবিক ভাবে উঠতে এর দ্বিগুন সময় লাগে। এই যন্ত্রের সাহায্যে গাছে উঠে আপনি পাড়তে পারেন নারকেল, স্প্রে করতে পারেন ওষুধ ও কীটনাশক, অথবা করতে পারেন পাতা ছাড়ানোর কাজ। কেরালা রাজ্যে প্রথাগতভাবে নারকেলগাছে ওঠার কাজ করতেন যে 'থান্ডান'-রা, তাঁরা অনেকেই অন্যান্য জীবিকায় বেশী উপার্জনের সুযোগ পেয়ে, এই বিপজ্জনক জীবিকাটি ছেড়ে দিচ্ছেন। ফলে নারকেল পাড়ার লোক পাওয়া দায় হয়েছে। মজুরিও বেড়ে গেছে প্রায় দশগুণ। এমতাবস্থায় আপ্পাচানের যন্ত্রটি নারকেল চাষিদের কাছে পরিত্রাতা রূপে হাজির হয়েছে। আপ্পাচান অবশ্য এই আবিষ্কারের মূল কৃতিত্ব, তাঁর বাবাকে দিয়েছেন। তিনি বলেন "গোটা কৃতিত্ব আমার বাবার। মূল যন্ত্রটি ওঁরই তৈরী। আমি শুধু কিছু প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করেছি মাত্র।" আপ্পাচানের প্রথাগত শিক্ষা খুবই অল্প হলেও, মাথায় ভরা প্রযুক্তির পোকা। খুব অল্প বয়সে নিয়ে নেন মেটাল স্মিথের একটি ট্রেনিং। এখানেই তিনি শেখেন লোহা ও ইস্পাত গলাতে ও বাঁকাতে। ২০০৬ সালে গড়ে তোলেন নিজের কর্মশালা। বর্তমানে একটি যন্ত্রের দাম পড়ে লোহার তৈরী হলে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১৫০০ টাকা। ইস্পাতের তৈরী যন্ত্রের দাম কিছু বেশি পড়ে। এই যন্ত্রটি বাজারে বিপণন করছে 'সেন্ট্রাল কোকোনাট বোর্ড' এবং 'দ্য কাউন্সিল ফর সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ'।

শয়তান অবশ্যই কারারুদ্ধ এবং তা এই কক্ষেই

উপমহাদেশের বিখ্যাত উর্দু কবি মির্জা গালিব (পুরো নাম মির্জা আসাদুল্লাহ খান গালিব), ছিলেন জুয়া খেলায় প্রবল আসক্ত। এ বিষয়ে তাঁর কোন রাখঢাক ছিল না। কোন এক রমজান মাসের দিনে, গালিবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু কবি ও ইসলামী আইনের বিশেষজ্ঞ মুফতি সদরুদ্দিন আজুর্দা, গালিবের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে দেখেন, গালিব ঘরে বসে জুয়া খেলছেন। গালিবকে এ অবস্থায় দেখে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে মন্তব্য করেন যে, তাঁর সন্দেহ হচ্ছে, পবিত্র গ্রন্থাদিতে যে বলা হয়েছে, রমজান মাসে শয়তান কারারুদ্ধ থাকে, তা সত্য কিনা। উত্তরে গালিব তাঁকে স্বাগত জানিয়ে বললেন, "গ্রন্থের বক্তব্য প্রকৃতই যথার্থ; কেননা শয়তান অবশ্যই কারারুদ্ধ এবং তা এই কক্ষেই।"

তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ